#পাঠ_প্রতিক্রিয়া
বই: লালকালো
লেখক: গিরীন্দ্রশেখর বসু
প্রকাশক: ঘরে বাইরে পাবলিশার্স
আমি যত না বই খুঁজে পাই, বই আমায় প্রায়ই খুঁজে নেয়। যখন কথা হলো সুচেতনাদির সাথে, জানতে পারলাম ওনাদের ‘ঘরে বাইরে’ প্রকাশনী থেকে প্রথম প্রকাশের অনুলিপি করে বের হয়েছে লালকালো বইটি। ব্যাস সঙ্গে সঙ্গে অর্ডার করে দিলাম। আর এসেও গেল দুদিনে। প্যাকেটটা খুলতে দুদিন দেরি হয়েছে কিন্তু শুরু করলে একবারে শেষ করেই উঠেছি। তার গৌণ কারণ হচ্ছে ‘লালকালো’ একটি মাত্র ছিয়াত্তর পাতার পাতলা বই, কিন্ত মুখ্য কারণ হচ্ছে যে ‘লালকালো’ একবার ধরলে শেষ না করে ছাড়া যায় না। এই বই নিয়ে বেশি আলোচনা শোনা যায়না। হয়ত, বাজারকরণের অভাব। কিন্তু এই বই নিঃসন্দেহে সুকুমার রচনার সমতুল্য। বিশ্বাস না হলে একবার পড়ে দেখতে পারেন। আমার তো এত দেরিতে পড়ার জন্য খুব আফসোস হচ্ছে।
লালকালো’র একটা দারুন ভালো ব্যাপার হচ্ছে যে এই বই গল্পছলে যুদ্ধ, কূটনীতি, আর বন্ধুত্বের পাঠ দিয়ে যায়। তাই ছোটদের সাথে সাথে এটা বড়দের জন্যও মনোগ্রাহী হয়ে ওঠে। আর হবে নাই বা কেন? ছোট, বড় সবার মনোজগত সম্পর্কেও আর পাঁচজনের থেকে বেশি খবর রাখতেন লেখক শ্রী গিরীন্দ্রশেখর বসু। তিনি ছিলেন আধুনিক মনস্তত্ত্ববিদ্যার একজন ডাকসাইটে অধ্যাপক এবং গবেষক। ওনার আরো একটি পরিচয় যা বইপোকাদের উৎসাহী করবে তা হচ্ছে তিনি পরশুরাম, শ্রী রাজশেখর বসুর ভাই। পরশুরামের লেখার সাথে এখানে একটা মিল পাবে পাঠকেরা স্বচ্ছন্দ দেহাতি হিন্দির ব্যবহার। যেমন নিচের কবিতাটি –
কাঁহা গেইলই বেঙবা কাঁহা গেইলই হো
এহন্ সুন্নর্ বেঙ কাঁহা পাইবই হো,
ঝুমুর ঝুমুর ঝুমুরি
রি রি রি
আরে ফুদ্দি চিড়ইয়াঁ বোল মোরে কো
লে গইল বেঙবা কাঁহা গেইলই হো
রি রি রি
ঝুমুর ঝুমুর ঝুমুরি
ঝম্ ঝম্ ঝম্
আর সে করুণ ডাক কানে যেতেই যখন কটকটি ব্যাং সাড়া দিলো,
কট্ কট্ কট্ কট্ কোঁ
হাম্মে ইধর হো।
গল্পের কথায় আসা যাক। ঘোষেদের পুরনো ভিটের ধারে যে ডোবা আছে, তার একদিকে কালো পিপীলিদের রাজ্য, আর একদিকে লাল পিপড়েদের রাজত্ব। দুই রাজত্বের মধ্যে খুব বিশেষ বনিবনা নেই। কালো ও লাল পিপড়েদের মধ্যে প্রায়ই খুটিনাটি নিয়ে ঝগড়া মারামারি হয়।
আর এই লাল পিঁপড়ে আর কালো পিপিলিদের যুদ্ধের নানান ঘটনা নিয়ে এই গল্প – “লাল কালো”। বাংলার পোকামাকড়, সাপ, ব্যাঙ, গিরগিটি থেকে পাখির সমাগমে সে এক জমজমাট ব্যাপার। এখানে গল্প এগিয়েছে ছড়া গান আর অনবদ্য অলংকরণের সাথেই। অলংকরণ করেছেন যতীন্দ্রকুমার সেন। যিনি সাদাকালো ছবি দিয়ে পরশুরামের গল্পের সঙ্গে অবিস্মরণীয় সংগত দিয়েছিলেন, তিনিই ‘লালকালো’র ছবি এঁকেছেন। আর তাতেই এই বই এর মহিমা দ্বিগুন হয়েছে।
লালেরা কালোদের থেকে বেশি তেজীয়ান ছিল, কিন্তু কালোরা ছিল বন্ধুবৎসল। আর সেই বন্ধুদের সাথে একতাই আনে জয়। প্রসঙ্গত এই বই যখন লেখা হচ্ছে তখন ভারত পরাধীন। তাই ধরা যায় এখানে লাল পিঁপড়েরা ইংরেজদের আর কালো পিপিলিদের মধ্যে ভারতীয়দের বুঝিয়েছেন লেখক।
উনিশশো তিরিশে প্রথম প্রকাশের সময় ‘লালকালো’র ছবি ছিল উজ্জ্বল লালহলুদসবুজকালো।‘ঘরে বাইরে’ প্রকাশনের বইটির মূল আকর্ষণ হচ্ছে এটি প্রথম প্রকাশের অনুলিপি । মূল বানান রীতি আর অরিজিনাল ছবি সহ এই সংস্করণ একটি সংগ্রহ করে রাখার মতন বই। বইটি পাওয়া যাচ্ছে boipoka.in এ। সবার সুবিধার জন্য এখানে লিংকটি দিলাম।